এমন যদি হতো!

প্রচ্ছদ » লেখালেখি » এমন যদি হতো!
এমন যদি হতো

এমন যদি হতো! এমন ভাবনা আমরা প্রায় ভাবি, কারণ যা ভাবি তা হয়না। কখনো একটু হয়, কখনো মোটেও হয়না। একটা সুন্দর সাজানো ঘোছানো দেশ কে না চায়? সেই ভাবনা থেকেই এই লেখা। আগে ভাগে বলে দিচ্ছি এখানে পয়েন্ট আছে ১৯ টি শব্দ আছে ৮১৭ ও ৫০৬৮ অক্ষর রয়েছে। এই লেখা পুরোটা না পড়লেও চলবে। শুধুমাত্র যেকোন একটি পয়েন্ট যেটা আপনার সাথে যাচ্ছে সেটা ধরে চর্চা শুরু করুন। বাকিগুলো অন্যদের জন্য ছেড়ে দিন।

১. রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালগুলো একটিভ থাকবে। যখন যেদিকের লাইট জ্বলবে সেদিকের গাড়ি যাবে। ট্রাফিক পুলিশ থাকবে বড়জোর পেট্রোলিং এ।

২. রাস্তা, ফুটপাতে কোন দোকান বসবেনা। ফুটপাত হাঁটার জন্য আর রাস্তা গাড়ি চলার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ পারাপারের জায়গায় আন্ডারপাস, ওভারপাশ। এলাকার রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং থাকবে।

৩. ওভারস্পিড, যেখানে সেখানে রাস্তা পার হওয়া কন্ট্রোল করবে অটোমেটেড ক্যামেরা।

৪. পাবলিক বাস থাকবে সরকারের আন্ডারে। টেন্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন রুটে বিনিয়োগ করবে প্রাইভেট কোম্পানি। বাসের নাম, ব্র্যান্ডিং রাষ্ট্রের হবে। ভাড়া কেটে নেবে অটোমেটিক। চেকার এখনো আছে, তখনো থাকবে। জাস্ট মেশিন লাগিয়ে চেক করবে যাত্রীরা ঠিকঠাক ভাড়ার কার্ড পাঞ্চ করছে কিনা। বাস যেখানে সেখানে থামবে না। স্টপেজ টু স্টপেজ থামবে।

দুবাইর বাস টিকেট রিচার্জ বুথ!

৫. নির্দিস্ট মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে থাকবে হেলথ ইন্সুরেন্স। নাগরিকরা নিকটস্থ হাসপাতাল ক্লিনিকে গিয়ে সেসকল সেবা উপভোগ করবে। এরবাহিরে বিভিন্ন ধরণের টিকার খবর মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে এলাকাবাসীদের। ভোটের মৌসুমে বাল্ক মেসেজ পাঠানোর জন্য টাওয়ার ধরে নাম্বার ম্যানেজ করতে পারলে এখানেও পারার কথা।

৬. প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীর পাশাপাশি কর্মমূখি শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা, সেই সাথে যে যেটার উপর প্রশিক্ষিত সেটার পাইলটিং করার সাপোর্ট প্রতিষ্ঠান থেকে দেবে। পাইলটিং এ সফলতা পেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে উক্ত ছাত্রের ব্যাপারে সুপারিশ করবে। তার পার্সোনাল ডিটেইলস, প্রাতিষ্ঠানিক সনদ ও প্রাতিষ্ঠানিক সুপারিশের উপর ভিত্তি করে তাকে লোন দেয়া হবে। সে মাসে বা বছরে সেটা শোধ করবে। একই সাথে নিয়মিত তদারকির জন্য দু ধরণের প্রতিষ্ঠান থেকেই ফিল্ড অফিসার নিয়োজিত থাকবে।

৭. আয়ের উপর ট্যাক্স দেয়ার বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন করার পাশাপাশি যারা নিন্ম আয়ের রয়েছে তাদের আয় কিভাবে বাড়ানো যায় সেটার জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকবে।

৮. নগরায়নের জন্য যেহেতু বেশি গাছ কাটা হচ্ছে সেহেতু সবাই যাতে যে যেখানে আছে সেখানেই গাছ লাগাতে পারে ও গাছের পরিচর্যা করতে পারে সেটার জন্য এলাকাভিত্তিক নার্সারী, ও যারা বেশি গাছ লাগাচ্ছে তাদের জন্য রিওয়ার্ডের আয়োজন থাকবে। অমুক এলাকার ‘ম্যান অফ দ্যা গ্রিন’ টাইপের।

৯. পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে কর্পোরেট কোম্পানিদেরকে সাথে নিয়ে তাদের সি এস আর ফান্ড দিয়ে জেলা ওয়াইজ প্লাস্টিক রিসাইকেলের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব প্লাস্টিকের রিসাইকেল এখনো হচ্ছেনা সেগুলোকেও সংগ্রহ করে বিকল্প প্রোডাক্ট তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে।

১০. প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ, পার্ক, কমিউনিটি সেন্টার, পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করে কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট করে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের এক্টিভিটি চালু করে সামাজিক ও মানবিক সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে হবে।

১১. শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে শুধু নাম্বার আর র‍্যাংকের পেছনে না দৌড়ে কিভাবে প্রকৃত শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়া যায় সেই বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।

১২. মানুষের পাশাপাশি পৃথিবীটা পশুপাখিদের জন্যও উপযোগী করতে তুলতে হবে।

১৩. সাউন্ড পলিউশন কমানোর উদ্দ্যেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অপ্রয়োজনে হর্ণ, বিয়ে বাড়িতে সহনশীল মিউজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের শব্দ যাতে কোথাও কারো কারো অসুবিধার কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেই বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

১৪. ব্যবসা করতে গেলে রেজিস্ট্রেশন মাস্ট, রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম সব দোকানে থাকতে হবে। একইসাথে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সুবিধার মতো এক এম এফ এস থেকে অন্য এম এফ এসে টাকা পাঠানো বা পেমেন্ট করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

১৫. ফ্রিল্যান্সারদের সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদেরকে ন্যাশনাল ডেটাবেজের আওতায় এনে তাদেরকে তাদের ভাল মন্দের সঙ্গী হতে হবে।

১৬. বিদেশে শুধু শ্রমিক রপ্তানি না করে দক্ষ জনবল পাঠাতে হবে। একই সাথে প্রবাসীদের ‘রেমিটেন্স যোদ্ধা’ নামক বাবু ট্যাগ দিয়ে ফেলে না রেখে তাদের যাতায়াতের সুবিধা অসুবিধা, তাদের জন্য বিশেষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা, লাইফ ইন্সুরেন্স ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে দেশে বিদেশে তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর রেখে তাদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে হবে।

১৭. দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে সকল শ্রেণীর নাগরিক সেই পরিমাণ আয় রোজগার ও বেসিক লাইফস্টাইল মেন্টেইন করতে পারছে কিনা সেই খবর রাখতে হবে।

১৮. পর্যটন এলাকাকে পর্যটন এলাকার মতো করে রেখে সেখানে বিদেশী পর্যটক আকর্ষনের সাথে সাথে তারা যা যা চায় সেই ব্যবস্থা করার সাথে সাথে পর্যটন এলাকায় যাতে কেউ গলা কাটা দাম না বসায় সেই বিষয়ে কঠোর নজরদারি ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

১৯. ভেজাল বিরোধী কার্যক্রম ও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় কঠোর হতে হবে।

দূর্নীতি কোন পয়েন্ট রাখিনাই কারণ দূর্নীতি তখনই হয় যখন মানবিক মূল্যবোধ না থাকে। উপরের পয়েন্ট ধরে নিচে আসতে আসতে দূর্নীতি আর থাকার কথা না। উপরে উল্লেখিত অনেক পয়েন্টে হয়তো ইতোমধ্যে কাজ চলছে। আবার কিছু পয়েন্টে কাজ চাইলেই শুরু করা যায়। আবার অনেক পয়েন্ট আমি টাচ করতে পারিনাই। যা যা মাথায় আসছে তা লিখে রাখলাম। ‘বাংলাদেশে এগুলো জীবনেও সম্ভব না’ কমেন্ট যারা যারা দিবেন তাদেরকে অগ্রিম স্বাগতম। কারণ আপনার ভাবনার সাথে আমি পরিচিত।

বাকি কোন পয়েন্ট লজিক্যাল মনে হলে সেটার উপরে চর্চা করুন। আপনি হতাশ হয়ে যেই বিদেশে যাবার চিন্তা করছেন তারাও কোন না কোন সময় এভাবে পয়েন্ট ধরে ধরে চিন্তা করেছে। নিজেদের দেশ, নিজের মাটি। এখানে সুখ খুঁজে না পেলে কোথাও খুঁজে পাবেন না। এসি রুম, পাকা পায়খানা আর সাজানো রাস্তাঘাট এখন স্বল্প পরিসরে দেশেও পাওয়া যাচ্ছে। আপনি ঐ পর্যন্ত যেতে পারছেন না কারণ ‘কর্ম’!

Leave a Reply

Your email address will not be published.